ব্যবসা-বাণিজ্য বা সরকারি-বেসরকারি যে কোনো প্রতিষ্ঠানে পণ্য ক্রয়, সেবা গ্রহণ বা কোনো নির্মাণ কাজ সম্পাদনের জন্য টেন্ডার বা দরপত্র একটি অপরিহার্য প্রক্রিয়া। সঠিক টেন্ডার পদ্ধতি অনুসরণ করলে একদিকে যেমন স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত হয়, তেমনই প্রতিষ্ঠানের অর্থ সাশ্রয় হয় এবং মানসম্মত কাজ পাওয়া যায়। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের টেন্ডার পদ্ধতির মধ্যে কোনটি কখন ব্যবহার করা উচিত, তা নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় ভোগেন।
এই আর্টিকেলে আমরা বিভিন্ন প্রচলিত টেন্ডার পদ্ধতির সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা, তাদের সুবিধা-অসুবিধা এবং কখন কোনটি ব্যবহার করা যুক্তিযুক্ত (ব্যবহারিক দৃষ্টিভঙ্গি) তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
টেন্ডার বা দরপত্র কী?
সহজ ভাষায়, টেন্ডার বা দরপত্র হলো কোনো নির্দিষ্ট কাজ বা পণ্য/সেবা ক্রয়ের জন্য আগ্রহী সরবরাহকারী বা ঠিকাদারদের কাছ থেকে প্রতিযোগিতামূলক প্রস্তাব আহবান করার একটি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে সবচেয়ে যোগ্য ও সাশ্রয়ী প্রস্তাবদাতাকে কাজটি প্রদান করে।
কেন বিভিন্ন টেন্ডার পদ্ধতির প্রয়োজন?
সব কাজ বা ক্রয়ের প্রকৃতি এক রকম হয় না। কিছু কাজ অত্যন্ত জটিল ও ব্যয়বহুল, আবার কিছু কাজ তুলনামূলকভাবে সহজ ও কম খরচের। কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করা জরুরি, আবার কিছু ক্ষেত্রে অনেক সরবরাহকারীর মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি করা মুখ্য উদ্দেশ্য। কাজের এই ভিন্নতার কারণেই বিভিন্ন টেন্ডার পদ্ধতির উদ্ভব হয়েছে, যাতে প্রতিটি পরিস্থিতিতে সবচেয়ে উপযুক্ত পদ্ধতিটি বেছে নেওয়া যায়।
প্রচলিত কয়েকটি টেন্ডার পদ্ধতি ও তাদের বিশ্লেষণ:
আসুন, বহুল প্রচলিত কয়েকটি টেন্ডার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই:
- উন্মুক্ত
দরপত্র পদ্ধতি (Open Tendering Method - OTM)
- সীমিত
দরপত্র পদ্ধতি (Limited Tendering Method - LTM)
- দুই
পর্যায় বিশিষ্ট দরপত্র পদ্ধতি (Two-Stage Tendering Method)
- সরাসরি
ক্রয় পদ্ধতি (Direct Procurement Method - DPM) / একক
উৎস ক্রয় (Single Source Procurement)
- কোটেশন
আহবান পদ্ধতি (Request for Quotation - RFQ)
১. উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি (OTM)
- সংজ্ঞা: এটি সবচেয়ে প্রচলিত এবং আদর্শ টেন্ডার পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রিকা বা ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সকল যোগ্য ও
আগ্রহী সরবরাহকারী/ঠিকাদারদের দরপত্র জমা দেওয়ার জন্য আহবান জানানো হয়।
- কখন
ব্যবহৃত হয়:
- বড় অঙ্কের ক্রয় বা নির্মাণ
কাজের জন্য।
- যখন সর্বোচ্চ
প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে চাওয়া হয়।
- সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এটি বহুলভাবে ব্যবহৃত হয় (যেমন: পিপিআর অনুযায়ী)।
- যখন বাজারে অনেক যোগ্য সরবরাহকারী
বিদ্যমান থাকে।
- সুবিধা:
- সর্বোচ্চ
প্রতিযোগিতা: অধিক সংখ্যক অংশগ্রহণকারী
থাকায় ভালো মানের কাজ বা পণ্য পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
- স্বচ্ছতা
ও ন্যায্যতা: সকলের জন্য সমান সুযোগ থাকায় এই পদ্ধতি সবচেয়ে স্বচ্ছ বলে বিবেচিত
হয়।
- অর্থ
সাশ্রয়: প্রতিযোগিতার
কারণে তুলনামূলক কম মূল্যে কাজ সম্পন্ন করা বা পণ্য ক্রয় করা সম্ভব হয়।
- বৈষম্যহীনতা: কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে পক্ষপাতিত্ব করার সুযোগ কম থাকে।
- অসুবিধা:
- সময়সাপেক্ষ: বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, দরপত্র জমাদান, মূল্যায়ন ইত্যাদি ধাপে বেশি সময় লাগে।
- অধিক
প্রশাসনিক কাজ: প্রচুর দরপত্র জমা পড়লে সেগুলো যাচাই-বাছাই ও মূল্যায়ন
করা কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ।
- অযোগ্য
দরদাতার অংশগ্রহণ: অনেক সময় অযোগ্য বা অনভিজ্ঞ
দরদাতারাও অংশ নেয়, যা মূল্যায়ন প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করে।
- খরচ
বেশি: বিজ্ঞাপন
ও পুরো প্রক্রিয়া পরিচালনায় খরচ তুলনামূলক বেশি।
২. সীমিত দরপত্র পদ্ধতি (LTM)
- সংজ্ঞা: এই পদ্ধতিতে শুধুমাত্র পূর্ব-নির্বাচিত বা তালিকাভুক্ত সীমিত সংখ্যক যোগ্য সরবরাহকারী/ঠিকাদারদের মধ্যে দরপত্র আহবান করা হয়। সাধারণত উন্মুক্ত পদ্ধতিতে যে দীর্ঘ তালিকা তৈরি হয়, সেখান থেকে বাছাই করে অথবা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে এই তালিকা তৈরি করা হয়।
- কখন
ব্যবহৃত হয়:
- যখন কাজটি বিশেষায়িত
(Specialized) ধরনের এবং বাজারে অল্প কিছু প্রতিষ্ঠানই কাজটি করার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন।
- যখন জরুরি ভিত্তিতে
কোনো কাজ সম্পন্ন করা প্রয়োজন, কিন্তু সরাসরি ক্রয়ের মতো পরিস্থিতি নয়।
- মাঝারি অঙ্কের ক্রয় বা কাজের জন্য।
- যখন উন্মুক্ত
পদ্ধতিতে বারবার চেষ্টা করেও প্রত্যাশিত সাড়া পাওয়া যায়নি।
- সুবিধা:
- কম
সময়সাপেক্ষ: উন্মুক্ত
পদ্ধতির চেয়ে কম সময় লাগে, কারণ অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা সীমিত।
- যোগ্য
দরদাতার নিশ্চয়তা: যেহেতু পূর্ব-বাছাইকৃতদের
আমন্ত্রণ জানানো হয়, তাই অযোগ্য দরদাতার সংখ্যা কম থাকে বা থাকে না।
- প্রশাসনিক
কাজ কম: কম সংখ্যক দরপত্র মূল্যায়ন
করতে হয়।
- অসুবিধা:
- সীমিত
প্রতিযোগিতা: প্রতিযোগিতা
উন্মুক্ত পদ্ধতির মতো ব্যাপক হয় না, ফলে দাম কিছুটা বেশি হতে পারে।
- স্বচ্ছতা
নিয়ে প্রশ্ন ওঠার সুযোগ: যদি তালিকাভুক্তি
বা নির্বাচনের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ না হয়, তাহলে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠতে পারে।
- নতুন
প্রতিষ্ঠানের সুযোগ কম: নতুন কিন্তু যোগ্য প্রতিষ্ঠান
সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
৩. দুই পর্যায় বিশিষ্ট দরপত্র পদ্ধতি (Two-Stage Tendering
Method)
- সংজ্ঞা: এই পদ্ধতিতে দরপত্র দুটি ধাপে আহবান ও
মূল্যায়ন করা হয়।
- প্রথম
পর্যায়: কারিগরি
প্রস্তাব (Technical Proposal) আহবান করা হয়, যেখানে দরদাতারা তাদের অভিজ্ঞতা, কাজের পদ্ধতি, কারিগরি দক্ষতা ইত্যাদি উল্লেখ করে। এই পর্যায়ে কোনো আর্থিক প্রস্তাব চাওয়া হয় না। কারিগরি প্রস্তাবগুলো মূল্যায়ন করে যোগ্যদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয় এবং প্রয়োজনে তাদের সাথে আলোচনা করে কাজের পরিধি বা স্পেসিফিকেশন চূড়ান্ত করা হয়।
- দ্বিতীয়
পর্যায়: প্রথম পর্যায়ে
উত্তীর্ণ দরদাতাদের কাছ থেকে চূড়ান্ত স্পেসিফিকেশনের উপর ভিত্তি করে আর্থিক প্রস্তাব (Financial Proposal) আহবান করা হয়।
- কখন
ব্যবহৃত হয়:
- অত্যন্ত
জটিল ও প্রযুক্তি নির্ভর কাজের ক্ষেত্রে, যেখানে কাজের সঠিক স্পেসিফিকেশন শুরুতেই নির্ধারণ করা কঠিন।
- বড় আকারের টার্ন-কি প্রকল্প
(Turnkey Projects) বা ডিজাইন-নির্মাণ (Design-Build) চুক্তির ক্ষেত্রে।
- যখন ক্রয়কারী
প্রতিষ্ঠান দরদাতাদের কাছ থেকে উদ্ভাবনী সমাধান (Innovative Solution) আশা করে।
- সুবিধা:
- কাজের
মান নিশ্চিতকরণ: কারিগরি
দিক ভালোভাবে যাচাই করা যায়।
- জটিল
প্রকল্পের জন্য উপযুক্ত: দরদাতাদের
সাথে আলোচনার মাধ্যমে স্পেসিফিকেশন চূড়ান্ত করা যায়, ফলে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ কম থাকে।
- উদ্ভাবনী
সমাধান: দরদাতারা
তাদের সেরা কারিগরি দক্ষতা ও উদ্ভাবনী চিন্তা তুলে ধরতে পারে।
- অসুবিধা:
- অত্যন্ত
সময়সাপেক্ষ: দুটি পর্যায় সম্পন্ন
করতে অনেক বেশি সময় লাগে।
- জটিল
প্রক্রিয়া: পুরো প্রক্রিয়াটি
পরিচালনা করা জটিল ও ব্যয়বহুল।
- দরদাতাদের
জন্য ব্যয়বহুল: দুটি আলাদা প্রস্তাব
তৈরি করতে দরদাতাদেরও বেশি শ্রম ও অর্থ ব্যয় করতে হয়।
৪. সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (DPM) / একক উৎস ক্রয় (Single Source
Procurement)
- সংজ্ঞা: এই পদ্ধতিতে কোনো রকম প্রতিযোগিতা ছাড়াই সরাসরি কোনো একটি নির্দিষ্ট সরবরাহকারী বা ঠিকাদারের কাছ থেকে পণ্য বা সেবা ক্রয় করা হয় বা কাজ দেওয়া হয়।
- কখন
ব্যবহৃত হয়:
- জরুরি
অবস্থা: যখন তাৎক্ষণিকভাবে
পণ্য বা সেবা প্রয়োজন (যেমন: প্রাকৃতিক দুর্যোগ)।
- একমাত্র
সরবরাহকারী: যখন কোনো নির্দিষ্ট
পণ্য বা সেবার জন্য শুধুমাত্র একজনই পেটেন্টধারী বা অনুমোদিত সরবরাহকারী থাকে।
- গোপনীয়তা: জাতীয় নিরাপত্তা বা গোপনীয়তার স্বার্থে।
- মানসম্মত
ধারাবাহিকতা: পূর্ববর্তী
কাজের সন্তোষজনক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য (খুব সতর্কতার সাথে প্রযোজ্য)।
- অল্প অর্থমূল্যের
ক্রয়ের ক্ষেত্রে (নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত)।
- সুবিধা:
- দ্রুততম
পদ্ধতি: খুব দ্রুত ক্রয় বা কাজ সম্পন্ন
করা যায়।
- প্রশাসনিক
ঝামেলা কম: কোনো দীর্ঘ প্রক্রিয়ার
প্রয়োজন হয় না।
- অসুবিধা:
- প্রতিযোগিতা
নেই: কোনো প্রতিযোগিতা
না থাকায় উচ্চমূল্য প্রদানের ঝুঁকি থাকে।
- স্বচ্ছতার
অভাব: পক্ষপাতিত্ব
ও দুর্নীতির সুযোগ সবচেয়ে বেশি।
- সীমিত
ব্যবহার: শুধুমাত্র
বিশেষ ও যৌক্তিক ক্ষেত্রেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত, অন্যথায় আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
- এর জন্য শক্তিশালী
ও লিখিত যৌক্তিকতা প্রয়োজন।
৫. কোটেশন আহবান পদ্ধতি (Request for Quotation -
RFQ)
- সংজ্ঞা: এটি সাধারণত কম মূল্যের এবং সহজলভ্য পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতিতে ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান কিছু সম্ভাব্য সরবরাহকারীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবার জন্য লিখিতভাবে মূল্য তালিকা বা কোটেশন আহবান করে। এটি সীমিত দরপত্রের একটি সরলীকৃত রূপ।
- কখন
ব্যবহৃত হয়:
- কম মূল্যের
স্ট্যান্ডার্ড বা অফ-দ্য-শেলফ (Off-the-shelf) পণ্য ক্রয়ের জন্য।
- ছোটখাটো
মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য।
- যখন পণ্যের স্পেসিফিকেশন
খুব পরিষ্কার এবং বাজারে সহজেই পাওয়া যায়।
- সুবিধা:
- সরল
ও দ্রুত: প্রক্রিয়াটি
খুব সহজ এবং দ্রুত সম্পন্ন করা যায়।
- কম
খরচ: আনুষ্ঠানিক
দরপত্র প্রক্রিয়ার মতো ততটা খরচসাপেক্ষ নয়।
- অসুবিধা:
- বড়
বা জটিল ক্রয়ের জন্য অনুপযুক্ত: বড় বা জটিল কাজের জন্য এই পদ্ধতি যথেষ্ট নয়।
- সীমিত
প্রতিযোগিতা: যেহেতু অল্প কিছু সরবরাহকারীর
কাছ থেকে কোটেশন নেওয়া হয়, তাই ব্যাপক প্রতিযোগিতা হয় না।
ব্যবহারিক দৃষ্টিভঙ্গি: কোন পদ্ধতি কখন বাছবেন?
সঠিক টেন্ডার পদ্ধতি নির্বাচন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। নিচে কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো যা আপনাকে সঠিক পদ্ধতি বেছে নিতে সাহায্য করবে:
- কাজের
প্রকৃতি ও জটিলতা: কাজটি কি খুব সাধারণ, নাকি জটিল ও বিশেষায়িত? জটিল কাজের জন্য দুই পর্যায় বিশিষ্ট দরপত্র বা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সরবরাহকারীদের জন্য সীমিত দরপত্র উপযুক্ত হতে পারে।
- প্রাক্কলিত
ব্যয়: কাজের বা ক্রয়ের মোট আনুমানিক
মূল্য কত? বড় অঙ্কের ক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি শ্রেয়, অন্যদিকে খুব কম মূল্যের জন্য কোটেশন বা সরাসরি ক্রয় (নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে) ব্যবহার করা যেতে পারে।
- সময়ের
সীমাবদ্ধতা: কাজটি কত দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে? জরুরি পরিস্থিতিতে
সরাসরি ক্রয় বা সীমিত দরপত্র ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এর যৌক্তিকতা থাকতে হবে। উন্মুক্ত দরপত্র সবচেয়ে বেশি সময় নেয়।
- বাজারে
সরবরাহকারীর সংখ্যা ও ধরণ: নির্দিষ্ট
কাজটি করার মতো কতজন যোগ্য সরবরাহকারী বাজারে আছে? যদি অনেক থাকে, তবে উন্মুক্ত দরপত্র ভালো। যদি খুব কম বা একজনই থাকে, তবে সীমিত বা সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি বিবেচনা করা যেতে পারে।
- স্বচ্ছতা
ও জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তা: সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে
বা যেখানে জনগণের অর্থ জড়িত, সেখানে স্বচ্ছতা ও
জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য।
- আইন
ও নীতিমালা: আপনার প্রতিষ্ঠান
বা দেশের (যেমন: বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পিপিআর ২০০৮ ও
পিপিএ ২০০৬) ক্রয় নীতিমালা কোন পদ্ধতি সমর্থন করে বা বাধ্যতামূলক করে, তা জেনে নিতে হবে।
একটি কাল্পনিক উদাহরণ:
- দৃশ্যপট
১: একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
১০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ করতে চায়।
- সম্ভাব্য
পদ্ধতি: উন্মুক্ত
দরপত্র পদ্ধতি (OTM)। কারণ, এটি বড় অঙ্কের কাজ, অনেক যোগ্য ঠিকাদার পাওয়ার সম্ভাবনা এবং সরকারি কাজে স্বচ্ছতা জরুরি।
- দৃশ্যপট
২: একটি বেসরকারি
হাসপাতাল তাদের অপারেশন থিয়েটারের জন্য একটি বিশেষ ধরনের মেডিকেল স্ক্যানার কিনতে চায়, যা শুধুমাত্র জার্মানির একটি কোম্পানিই তৈরি করে।
- সম্ভাব্য
পদ্ধতি: সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (DPM) বা একক উৎস ক্রয়। কারণ, সরবরাহকারী
নির্দিষ্ট ও একক।
- দৃশ্যপট
৩: একটি ছোট আইটি ফার্ম অফিসের জন্য ১০টি স্ট্যান্ডার্ড
কনফিগারেশনের কম্পিউটার কিনতে চায়।
- সম্ভাব্য
পদ্ধতি: কোটেশন আহবান পদ্ধতি (RFQ)। কারণ, এটি কম মূল্যের
স্ট্যান্ডার্ড পণ্য এবং দ্রুত কেনা প্রয়োজন।
উপসংহার
বিভিন্ন টেন্ডার পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা ক্রয়কারী কর্মকর্তা এবং সরবরাহকারী উভয়ের জন্যই লাভজনক। ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান সঠিক পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থ সাশ্রয় করতে পারে, মানসম্মত কাজ পেতে পারে এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখতে পারে। অন্যদিকে, সরবরাহকারীরা পদ্ধতির ধরণ বুঝে নিজেদের প্রস্তুতি নিতে পারে এবং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য সঠিক কৌশল অবলম্বন করতে পারে। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি পদ্ধতির নিজস্ব সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী সবচেয়ে উপযুক্ত পদ্ধতিটি বেছে নেওয়াই বিচক্ষণতার পরিচায়ক।
জ্ঞান যাচাই পরীক্ষা (MCQs)
নিচের প্রশ্নগুলো থেকে সঠিক উত্তরটি বেছে নিন:
- কোন টেন্ডার পদ্ধতিতে
সর্বাধিক প্রতিযোগিতা নিশ্চিত হয়?
ক) সীমিত দরপত্র পদ্ধতি
খ) উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি
গ) সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি
ঘ) কোটেশন আহবান পদ্ধতি - জরুরি পরিস্থিতিতে
বা যখন বাজারে একমাত্র সরবরাহকারী থাকে, তখন কোন পদ্ধতি সবচেয়ে উপযুক্ত?
ক) উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি
খ) দুই পর্যায় বিশিষ্ট দরপত্র পদ্ধতি
গ) সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি
ঘ) সীমিত দরপত্র পদ্ধতি - জটিল ও প্রযুক্তি নির্ভর প্রকল্পের জন্য, যেখানে কাজের স্পেসিফিকেশন শুরুতেই নির্ধারণ করা কঠিন, কোন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়?
ক) কোটেশন আহবান পদ্ধতি
খ) সীমিত দরপত্র পদ্ধতি
গ) উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি
ঘ) দুই পর্যায় বিশিষ্ট দরপত্র পদ্ধতি - সীমিত দরপত্র পদ্ধতির প্রধান অসুবিধা কোনটি?
ক) অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ
খ) প্রশাসনিক কাজ খুব বেশি
গ) প্রতিযোগিতা কমে যায় এবং পক্ষপাতিত্বের সুযোগ থাকে
ঘ) অযোগ্য দরদাতার অংশগ্রহণের সম্ভাবনা বেশি - কম মূল্যের স্ট্যান্ডার্ড
পণ্য ক্রয়ের জন্য কোন পদ্ধতি বেশি উপযোগী?
ক) দুই পর্যায় বিশিষ্ট দরপত্র পদ্ধতি
খ) উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি
গ) কোটেশন আহবান পদ্ধতি
ঘ) সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (যদি না বিশেষ শর্ত থাকে) - উন্মুক্ত
দরপত্র পদ্ধতির একটি প্রধান সুবিধা হলো:
ক) দ্রুততম প্রক্রিয়া
খ) সর্বনিম্ন প্রশাসনিক কাজ
গ) স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা
ঘ) শুধুমাত্র বিশেষায়িত সরবরাহকারীদের অংশগ্রহণ - "পিপিআর" (PPR) কীসের সাথে সম্পর্কিত?
ক) পণ্য বিক্রয় নীতিমালা
খ) সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া
গ) পরিবেশ সংরক্ষণ আইন
ঘ) শ্রম আইন - দুই পর্যায় বিশিষ্ট দরপত্র পদ্ধতির প্রথম পর্যায়ে কী জমা দিতে হয়?
ক) আর্থিক প্রস্তাব
খ) নমুনা পণ্য
গ) কারিগরি প্রস্তাব
ঘ) ব্যাংক গ্যারান্টি - কোন টেন্ডার পদ্ধতিতে
বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সর্বসাধারণকে জানানো হয়?
ক) সীমিত দরপত্র পদ্ধতি
খ) সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি
গ) উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি
ঘ) কোটেশন আহবান পদ্ধতি - "OTM" এর পূর্ণরূপ কী?
ক) Official Tender Method
খ) Open Tendering Method
গ) Order Tendering Mandate
ঘ) One-Time Method - যদি একটি কাজের জন্য শুধুমাত্র
হাতে গোনা কয়েকটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানই যোগ্য হয়, তবে কোন পদ্ধতি শ্রেয়?
ক) উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি
খ) সীমিত দরপত্র পদ্ধতি
গ) সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি
ঘ) কোটেশন আহবান পদ্ধতি - সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির সবচেয়ে বড় ঝুঁকি কোনটি?
ক) প্রক্রিয়াগত জটিলতা
খ) সময় বেশি লাগা
গ) উচ্চমূল্য প্রদান ও দুর্নীতির সম্ভাবনা
ঘ) সরবরাহকারীর অভাব - কোন পদ্ধতিতে
দরদাতাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে কাজের স্পেসিফিকেশন চূড়ান্ত করার সুযোগ থাকে?
ক) উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি
খ) কোটেশন আহবান পদ্ধতি
গ) দুই পর্যায় বিশিষ্ট দরপত্র পদ্ধতি
ঘ) সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি - "RFQ" সাধারণত কাদের কাছে পাঠানো হয়?
ক) সকল আগ্রহী সরবরাহকারী
খ) শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক সরবরাহকারী
গ) কিছু সম্ভাব্য বা পরিচিত সরবরাহকারী
ঘ) শুধুমাত্র সরকারি তালিকাভুক্ত সরবরাহকারী - টেন্ডার পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য
কী?
ক) শুধুমাত্র সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দেওয়া
খ) দ্রুত কাজ সম্পন্ন করা
গ) স্বচ্ছ, প্রতিযোগিতামূলক ও সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত কাজ বা পণ্য সংগ্রহ করা
ঘ) সরকারি কোষাগারে অর্থ বৃদ্ধি করা
উত্তরমালা:
- খ) উন্মুক্ত
দরপত্র পদ্ধতি
- গ) সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি
- ঘ) দুই পর্যায় বিশিষ্ট দরপত্র পদ্ধতি
- গ) প্রতিযোগিতা
কমে যায় এবং পক্ষপাতিত্বের সুযোগ থাকে
- গ) কোটেশন আহবান পদ্ধতি
- গ) স্বচ্ছতা
ও
ন্যায্যতা
- খ) সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া
- গ) কারিগরি প্রস্তাব
- গ) উন্মুক্ত
দরপত্র পদ্ধতি
- খ) Open Tendering Method
- খ) সীমিত দরপত্র পদ্ধতি
- গ) উচ্চমূল্য
প্রদান ও
দুর্নীতির সম্ভাবনা
- গ) দুই পর্যায় বিশিষ্ট দরপত্র পদ্ধতি
- গ) কিছু সম্ভাব্য
বা পরিচিত সরবরাহকারী
- গ) স্বচ্ছ, প্রতিযোগিতামূলক
ও
সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত কাজ বা পণ্য সংগ্রহ করা
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন